বর্তমান সময়ের কলকাতার চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকে খুবই জনপ্রিয় নাম শ্রীলেখা মিত্র। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন তিনি নানা কারণে আলোচিত বা সমালোচিত।
যে শ্রীলেখা ঝলমলে রঙিন দুনিয়ায় বিচরণ করছেন, হয়তো এই জগতে তাঁর পা রাখার কথাই ছিল না। বিএ পাস করা মাত্রই তাজ হোটেলে চাকরিতে ঢুকেছিলেন। আকস্মিক এক ঘটনায় শ্রীলেখা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ পান এবং নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হন।
পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত লেখক সমরেশ মজুমদার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে 'টেলিফ্রেম' নামে একটি প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠান খুলেছেন। একের পর এক নাটক ও ধারাবাহিক বানিয়ে দারুণ জমিয়ে ফেলেছেন। সে সময় তাঁরই চিত্রনাট্যে একটি ধারাবাহিক নাটক বানানোর পরিকল্পনা হয় রঞ্জিত মল্লিককে কেন্দ্র করে। শ্রীলেখার নাটকীয়ভাবে অভিনয় জগতে প্রবেশের গল্পটি লিখেছেন 'আলোকিত অন্ধকার' নামে গ্রন্থে।
সমরেশ লিখেছেন, "ধারাবাহিকের নাম 'বালিকার প্রেম'। মা হারানো মেয়ে বাবাকেই ধ্যান-জ্ঞানে পৃথিবী মনে করে। মেয়ে বড় হলেও বাবার কাছে সে বালিকামাত্র। সেই মেয়ে কলেজে পা দিতেই একটি তরুণ এলো তাঁর জীবনে। এই টানাপড়েনেই নাটক এগিয়ে যাবে। রঞ্জিতের মেয়ের চরিত্রটিতে ভালো অভিনেত্রীর প্রয়োজন। সমস্যা হলো- তার বয়স বেশি হওয়া চলবে না। সে সময় ওই বয়সের অভিনেত্রী ইন্ডাস্ট্রিতে ছিল না। অথবা কেউ থাকলেও উল্লেখযোগ্য নয়। আমরা চারপাশে খোঁজ করতে লাগলাম। তখন পনেরো-ষোলো বছরের মেয়ে পড়াশোনার ক্ষতি করে অভিনয় করবে তা অভিভাবকরা চাইতেন না।
এই সময় একজন পরিচিত ভদ্রলোকের সূত্রে যে মেয়েটি অফিসে এলো, সে প্রায় ওই বয়সী। থাকে বিরাটিতে৷ জিজ্ঞেস করে জানলাম, সে ইতিমধ্যে বিএ পাস করেছে। খাটো চেহারায় চোখেমুখে সারল্য থাকায় বয়স বোঝা যায়নি। সে এসেছিল শাড়ি পরে। অভিনয় করতে হবে স্কার্ট পরে। সেটা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি বেরিয়ে গেল। ঘণ্টাখানেক পর ফিরে এলো স্কার্ট পরে। চমৎকার দেখাচ্ছিল তাকে৷ সংলাপ বলিয়ে ওই মেয়েটিকে চরিত্রে নেওয়া হলো। আমাদের দুর্ভাগ্য, নানা কারণে ধারাবাহিকটি শেষ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মেয়েটির অভিনয়ের খ্যাতি স্টুডিও থেকে ছড়িয়ে গিয়েছিল। পরে সে অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। মেয়েটির নাম শ্রীলেখা মিত্র।"
সমরেশ মজুমদারের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র জগতে আরো অনেক খ্যাতনামা অভিনেতা-অভিনেত্রী উঠে এসেছেন। পাঠকদের সামনে সে গল্প তুলে ধরা হবে মাঝেমধ্যেই।
সমরেশ মজুমদারের আলোকিত অন্ধকার গ্রন্থ থেকে লিখেছেন মাহতাব হোসেন