বিশ^ব্যাপী সংক্রমণ ছড়ানো একটি মরণব্যাধির নাম হচ্ছে করেনা ভাইরাস বা কভিড ১৯। যার ভয়াবহ ছোবলের হাত থেকে রক্ষা হচ্ছে না কারও। ধনী গরিব, ছোট বড়, যুবক বৃদ্ধ কেউ আমরা নিরাপদ নই এই ভাইরাস থেকে। এখনও যার কোনো চিকিৎসাও নেই বলা যায়। করোনার সংক্রমণ মানেই যেন মৃত্যু। যদিও কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- সমস্ত জীবই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। -সুরা আলে ইমরান : ১৮৫
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা কি স্বাভাবিক? গত বছর করোনার প্রথম ঢেউ যখন শুরু হয়। ঠিক তখন থেকেই আমাদের মনে কল্পনা জল্পনা হতে শুরু করে করোনা কী সত্যিই কোনো মহামারি? পবিত্র কুরআন, হাদিস ও ইতিহাস পাঠ থেকে আমরা জানতে পারি যে, অতীতেও অনেক জাতি বা জনগোষ্ঠীর ওপর প্লেগ-মহামারি জাতীয় রোগের বিস্তার ঘটেছিল। প্রাণহানি ঘটেছিল লাখও মানুষের। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. তাঁর ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’য় উল্লেখ করেছেন যে, ৪৭৮ খ্রিস্টাব্দে শাম ইরাক ও হিজাজে বিভিন্ন প্লেগ-মহামারি জাতীয় রোগ ছড়িয়ে পড়ে। মানুষসহ অনেক বন্য পশু-পাখিও এতে মারা যায়। -আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১১/১৪০
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী প্লেগ-মহামারি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য শাস্তি স্বরূপ। সীমাহীন অশ্লীলতার ছড়াছড়ির কারণেই এমন মহামারির আবির্ভাব হয়ে থাকে পৃথিবীতে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, হযরত দাউদ আ.-এর যুগের ধ্বংসপ্রাপ্ত এমন একটি ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়।
আপনি কি দেখেননি যারা মৃত্যুভয়ে হাজারে হাজারে স্বীয় আবাসভূমি ত্যাগ করেছিল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের বলেছিলেন, তোমাদের মৃত্যু হোক। -সুরা বাকারা : ২৪৩
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তারা সংখ্যায় ছিল চার হাজার। মহামারির ভয়ে তারা পালিয়ে ছিল। তারা বলেছিল, আমরা এমন ভূমিতে যাব যেখানে মৃত্যু নেই। অতঃপর তারা এক স্থানে একত্র হলো। তখন আল্লাহ তাদের ওপর মৃত্যু অবধারিত করেন।-তাফসিরে ইবনে কাসির
সুনানে তিরমিজির একটি হাদিস থেকে জানা যায় আল্লাহ তাআলা অতীতের কোনো কোনো গোত্রকে মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এটি ছিল আল্লাহর গজব বা শাস্তি। যা বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার অবশিষ্টাংশই মহামারি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। এ ছাড়া এমন সব ব্যাধি দেখা দেয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। -সুনানে ইবনে মাজাহ
সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে- আয়েশা রা. একদিন রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিম ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন প্লেগ-মহামারি সম্পর্কে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন- এটি হচ্ছে এক ধরনের শাস্তি। আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছে করেন, তার ওপর এ শাস্তি পাঠান। কিন্তু আল্লাহ তাআলা মুমিনের জন্য এটাকে রহমত বানিয়েছেন। তাই প্লেগ-মহামারি বা এ জাতীয় রোগে আক্রান্ত কোনো মানুষ যদি ধৈর্য ধারণ করে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে আপন শহরে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না; তবে তার জন্য থাকবে শহীদের সমপরিমাণ সাওয়াব।
তাই আমাদের জন্য কর্তব্য হলো যে, আমরা অন্যায় অশ্লীলতা মুক্ত জীবন যাপন গড়ব। আল্লাহর কাছে পাপ মুক্তির জন্য দুআ করব। তাওবা করব। যেমনটি কুরআনে আল্লাহ তাআলা মুমিন-বিশ^াস স্থাপনকারীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন- তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো। বিশুদ্ধ তাওবা। হয়ত তিনি তোমাদের গুনাহ-পাপ মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে। সুরা তাহরিম : ৮
আর হাদিসের ভাষ্য মতে যেহেতু এটা মুমিন বান্দার জন্য রহমত স্বরূপ। এমনকি মহামারি বা এ জাতীয় রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে শহীদি মৃত্যুর মর্যাদা লাভ হবে। তাই আমাদের উচিত হলো, চারদিকে প্রচারিত মৃত্যুর খবর শুনে ভয়ে ভীতসন্ত্রস্থ না হওয়া। বরং ধৈর্য ধারণ করা। যথাসাধ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। একজন মুমিন হিসাবে মৃত্যু পরবর্তী সময়ের জন্য বেশি বেশি সৎ কাজ, ভালো কাজ করা যেমন- দান সাদকা, মানুষের সেবা করা, অসহায়ের জন্য আহার বাসস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের জান্নাতের পথকে সহজ করুন। এই মহামারি থেকে আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। সুন্দর ও সুস্থ জীবন যাবন করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : ইসলাম বিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক/মীযান মুহাম্মদ হাসান